নারায়নগঞ্জের শীক্ষার্থীদের প্রত্যাশা কি পূরন করতে পারবে ডাকসু

০৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ নারায়ণগঞ্জ ভয়েস
img_
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু নির্বাচন নিয়ে সারা দেশের মতো নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও উত্তেজনা ও প্রত্যাশা তুঙ্গে। দীর্ঘ ছয় বছর পর আয়োজিত এই নির্বাচন শুধু বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেতৃত্ব বাছাইয়ের আয়োজন নয়—এটি গণতান্ত্রিক চর্চা ও ছাত্র রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে।

১৯৯০-এর দশকে সক্রিয় ছাত্র রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র ছিল ডাকসু। কিন্তু দীর্ঘদিন প্রত্যাশিত নির্বাচন না হওয়ায় এ সংগঠন অকার্যকর হয়ে পড়ে। ২০২৪ সালের গণআন্দোলনের পর রাজনৈতিক অচলাবস্থা কেটে গিয়ে এবার ডাকসু ও হল ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় ছাত্র রাজনীতিতে নতুন উদ্দীপনা ফিরে এসেছে।
এই প্রেক্ষাপটে নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, এই নির্বাচন কেবল কেন্দ্রীয় ছাত্র নেতৃত্ব তৈরিই নয়, বরং তাদের নিজ জেলার শিক্ষা ও উন্নয়ন বিষয়ক সমস্যা সমাধানে নতুন কণ্ঠস্বর তৈরি করবে।

নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রতি বছর শত শত শিক্ষার্থী ঢাবিতে ভর্তি হন। পুরনো ঢাকার নিকটবর্তী হওয়ায় রাজধানীর অন্যতম সংলগ্ন জেলা হওয়া সত্ত্বেও এখানকার শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হন।

শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা সম্পর্কে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ফতুল্লার বাসিন্দা মেহরাব হাসান বলেন,

আমরা চাই ডাকসু এমন একটি প্ল্যাটফর্ম হোক, যেখানে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীদের সমস্যাগুলো গুরুত্ব পাবে। যেমন—হলের সিট বণ্টনে স্বচ্ছতা, লাইব্রেরি ব্যবহারে সমান সুযোগ, এবং নারায়ণগঞ্জ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য বাস রুট বা পরিবহন সুবিধার উন্নয়ন।

একই প্রত্যাশার কথা জানান সোনারগাঁ উপজেলার ছাত্রী ফারজানা আক্তার। তিনি বলেন,

রাজনীতির জন্য নয়, আমরা চাই ডাকসু আমাদের পড়াশোনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করুক। বিশেষ করে মেয়েদের নিরাপত্তা এবং যৌন হয়রানি রোধে কার্যকর কমিটি গঠন জরুরি।


গত কয়েক দশকে ছাত্র রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাব বিস্তার এবং সহিংসতার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আস্থা কমে গেছে। নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীরা এবার এমন একটি নেতৃত্ব দেখতে চান যারা হবে দলমুক্ত, গণতান্ত্রিক এবং স্বচ্ছ।

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের শিক্ষার্থী সাদ্দাম হোসেন বলেন,

ডাকসু কেবল রাজনৈতিক দলগুলোর হাতিয়ার হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের কোনো উপকার হবে না। আমাদের দাবি, নির্বাচিত নেতৃত্ব যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সমস্যাগুলো সমাধানে মনোযোগ দেয় এবং সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে অন্ধ রাজনীতি না করে।


নতুন ডাকসুর মাধ্যমে নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীরা প্রত্যাশা করছেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের জন্য একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক গড়ে উঠবে, যা শুধু শিক্ষার মান উন্নয়ন নয়, ভবিষ্যতে নারায়ণগঞ্জের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নেও অবদান রাখবে। তবে শিক্ষার্থীদের মতে, যদি নির্বাচিতরা পুরনো ধারা অব্যাহত রাখেন এবং ক্ষমতার রাজনীতিতে নিমগ্ন হন, তাহলে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে না।


নারায়ণগঞ্জের শিক্ষার্থীরা বিশ্বাস করেন, ডাকসু নির্বাচন কেবল একটি ভোট নয়—এটি তাদের কণ্ঠস্বরকে জাতীয় প্ল্যাটফর্মে তুলে ধরার সুযোগ। তারা আশা করছেন, নতুন নেতৃত্ব গণআন্দোলনের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং সমঅধিকার নিশ্চিত করবে।

আমরা চাই, ডাকসু আমাদের প্রতিনিধি হয়ে সত্যিকারের ছাত্রবান্ধব পরিবেশ তৈরি করুক। এতে কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, গোটা দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
—মতিন মোল্লা, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের শিক্ষার্থী